জুলাই পুনর্জাগরণ উপলক্ষে অনুষ্ঠানমালা
কেন্দ্রীয় শহীদমিনারে অনুষ্ঠিত হলো ‘ড্রোন শো ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান’
জুলাই গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের জন্য একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। যার মাধ্যমে আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতিকে পুনর্জাগরণে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় আয়োজন করা হয়েছে মাসব্যাপী নানান অনুষ্ঠানমালা। এরই অংশ হিসেবে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় আজ ১৪ জুলাই ২০২৫, সোমবার কেন্দ্রীয় শহীদমিনারে July Women’s Day চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের স্মৃতিচারণ, “জুলাইয়ের গান ও ড্রোন শো”-এর আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, মহিলা ও শিশু বিষয়ক এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় মাননীয় উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্কের অ্যাম্বাসেডর, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: মফিদুর রহমান এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সচিব ও দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন প্রমুখ।
সন্ধ্যা ৬:৩০ টায় “মোরা ঝঞ্ঝার মত উদ্দাম” শিরোনামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। সম্মিলিতকন্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কণ্ঠশিল্পীবৃন্দ, সংগীত বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী সায়ান।
সন্ধ্যা ৭টায় July Women’s Day উপলক্ষে ‘মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়’ নির্মিত ডকুমেন্টারী জুলাই উইমেন প্রদর্শিত হয়। এরপর মঞ্চে উঠেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী সায়ান। তিনি একে একে পরিবেশন করেন ‘আমি জুলাই এর গল্প বলবো’, ‘আমিই বাংলাদেশ’, ‘জয় বাংলার’, ‘হুশিয়ারি’, ‘তাজ্জব বনে যাই’, ‘আমার নাম প্যালেস্টাইন’, প্রভৃতি জনপ্রিয় গান।
অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে চলে জুলাইয়ের স্মৃতিচারণ। জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বক্তব্য প্রদান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সাবিনা লুৎফা, অধ্যাপক ড. চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সদস্য নুসরাত তাবাসসুম, শহীদ নাইমা সুলতানার মা, আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ, জাগাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহাগী সামিহা, জুলাই আন্দোলনের অংশগ্রহণকারী তাসনিম, যাত্রাবাড়ীতে জুলাই আন্দোলনে চোখ হারানো পারভীন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বর্ণা রিয়া, ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী ইভা, চট্টগ্রামের কলি কায়েস, নারায়ণগঞ্জের তুলারাম কলেজের জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ফারহানা মালিক, মাদারীপুরের জুলাই আন্দোলনের আনিশা, ওমামা ফাতেমা ও মালিহা নামলা প্রমুখ। এছাড়াও বক্তব্য প্রদান করেন নারী ফুটবল ফেডারেশনের সদস্য অর্পিতা বিশ্বাস এবং সৌরভী আকন্দ প্রীতি। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে স্লোগান গার্লরা মঞ্চে এসে স্লোগান দেন। প্রদর্শিত হয় আবরার ফাহাদকে নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র,‘দিপক কুমার গোস্বামী স্পিকিং’ ও ‘জুলাই বিষাদ সিন্ধু’ চলচ্চিত্রসমূহ।
সংগীত পরিবেশন করেন ব্যান্ডদল ইলা লা লা। তারা পরিবেশন করে ‘সংগতি’, ‘অচিরজীবির প্রার্থনা’, ‘বাঘের গান’ ও ‘নীল নির্বাসন’ গানসমূহ। এফ মাইনর পরিবেশন করেন ‘আলো আসবেই’, ‘মুক্তি’, ‘ডাহুক’ ও ‘মেয়ে’ প্রভৃতি গানসমূহ। পারসা মাহজাবীন ‘চলো ভুলে যাই’, ‘মুক্তির মন্দির’ ও ‘মোরা ঝঞ্ঝার মত উদ্দাম’ গান পরিবেশন করেন। ‘আমি বাংলায় গান গাই’, ‘ধন ধান্য পুষ্প ভরা’, ‘পলাশীর প্রান্তর’, ‘ঘুরে দাঁড়াও’ ও ‘বাংলাদেশ’ গানসমূহ পরিবেশন করেন শিল্পী এলিটা করিম।
রাত ১১.২০ টায় বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে শুরু হয় মিউজিক্যাল ‘ড্রোন শো’। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এবং চীন সরকার কর্তৃক যৌথভাবে এই ‘ড্রোন শো’-তে ২০০০ ড্রোন উড্ডয়নের মাধ্যমে জুলাইয়ের গল্প তুলে ধরা হয়। ১৪ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের মেয়েরা স্রোতের মতো বেরিয়ে এসে আন্দোলনে নতুন প্রাণের সঞ্চার ঘটায়। শহীদমিনারের উপরে সেই জীবন্ত মুহূর্তটাকে প্রদর্শন করা হয় ‘ড্রোন শো’ এর মাধ্যমে। ড্রোন শো এর প্রথম ধাপে দেখানো হয় কীভাবে বাংলাদেশ জুলাই এ এসে পৌঁছালো। দ্বিতীয় ধাপে দেখানো হয় কেমন করে ১৪ তারিখে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে জুলাইয়ের সূচনা হলো। রাত ১২.০০ ঘটিকার পরেও নির্ধারিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছিল।