বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির
বিশ্ব সংগীত দিবস উদযাপন
“যে দেশে যত বেশি সাংস্কৃতিক চর্চা হবে বিশেষ করে সংগীতের চর্চা হবে সে দেশে যুদ্ধ থাকতে পারে না।”
--- মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন, সচিব ও মহাপরিচালক (দায়িত্বপ্রাপ্ত), বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি
২১ জুন বিশ্ব সংগীত দিবস। সংগীত দিবসের সূচনা হয়েছিল ফ্রান্সে। সেখানে এই উৎসবের নাম দেয়া হয় ‘ফেট ডে লা মিউজিক’। যার অর্থ ‘বিশ্ব জুড়ে সংগীতের দিন’। ১৯৮২ সালে বিশেষ এই সংগীত উৎসবের দিনটি ‘ওয়ার্ল্ড মিউজিক ডে’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। সংগীতের সুরে বিশ্বব্যাপী শান্তি ও ইতিবাচক চিন্তা ও দর্শনকে ছড়িয়ে দিয়ে সবার সাথে মেলবন্ধন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যেই প্রতিবছর দিবসটি পালিত হয়।
বিশ্ব সংগীত দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের আয়োজনে আজ 21 জুন 2025, শনিবার সন্ধ্যা ৬:৩০ টায় জাতীয় নাট্যশালায় আয়োজন করা হয় অনুষ্ঠান ‘সুরের সম্মিলন’।
জাতীয় নাট্যশালার সম্মুখে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সচিব ও দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের পরিচালক মেহজাবীন রহমান। এছাড়াও বিশিষ্ট সংগীতশিল্পীবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অতিথিবৃন্দের বক্তব্যের পর নাট্যশালার সম্মুখে বেলুন উড়িয়ে বিশ্ব সংগীত দিবসের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন। এরপর বিশ্ব সংগীত দিবস উপলক্ষ্যে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। অনুষ্ঠানের সভাপতি, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সংগীতশিল্পীবৃন্দ এই শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সচিব ও দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন বলেন, “আজ হচ্ছে উৎসবের দিন। যারা সংগীত চর্চায় মনোনিবেশ করেছেন, যাঁদের জীবন অতিবাহিত করেছেন বা করছেন আজ তাঁদের উৎসবের দিন। বিশ্ব সংগীত দিবসের একটি ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সূতিকাগার হচ্ছে ফ্রান্স। সেখানে এই দিবসের সূচনা হয়েছিল। আমাদের অস্থিরতা ও সুস্থতার জন্য সংগীত কতটুকু নিরাময় ভূমিকা পালন করে- এই বৈশ্বিক দিবস পালনের মাধ্যমে সেটি আমরা বুঝতে পারি। যারা সংগীত এবং ফুলকে ভালোবাসেন তারা কখনো অন্যায় করতে পারেন না। আমাদের ভেতরের যে তাড়না, ভেতরের যে কালো অধ্যায়, ভেতরের যে কুলষিত রূপ সেটি আমরা মুছে দিতে পারি শুধুমাত্র সংগীতের মাধ্যমে।”
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সচিব ও দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাপরিচালক বলেন, “আমরা আজ দেখছি বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় অস্ত্রের ঝনঝনানি, ক্ষমতার দম্ভ, ক্ষমতার দাপট। মানবতাকে ভুলে, মানবতাকে ভুলন্ঠিত করে আজ শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাইকে হত্যা করছেন। আমি মনে করি, যে দেশে যত বেশি সাংস্কৃতিক চর্চা হবে বিশেষ করে সংগীতের চর্চা হবে সে দেশে যুদ্ধ থাকতে পারে না। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি শুধু সংগীত চর্চাকে নয় সাংস্কৃতিক সমস্ত মাধ্যমকে লালন করে, পালন করে এবং বিকশিত করার জন্য সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সংগীতের সাথে জড়িত সকল ধরণের শিল্পীদের আন্তরিক অভিবাদন ও কৃতজ্ঞা জানিয়ে সংগীত দিবসটি সকলের মাঝে ছড়িয়ে যাক, সকলের মাঝে আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটাক সেই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।”
জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে মূল আয়োজনে শুরুতেই বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির যন্ত্রশিল্পীবৃন্দ ‘অর্কেস্ট্রা’ এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কণ্ঠশিল্পীবৃন্দ ‘কোলাজ’ সংগীত পরিবেশন করেন। আদিবাসী গান পরিবেশন করেন ব্যান্ডদল ‘চিম্বুক’ ও ‘বম শিল্পীগোষ্ঠী’। এরপর ‘জনপ্রিয় তারকা শিল্পীবৃন্দ’ পরপর কয়েকটি সমবেত সংগীত পরিবেশন করেন। সবশেষে জনপ্রিয় ব্যান্ড শিল্পীবৃন্দ ‘কোলাজ’ সংগীত পরিবেশন করেন।