বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন
“প্রেমের কবি, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ইতোপূর্বে জাতীয় কবি হিসেবে মৌখিকভাবে বলা হলেও সরকারিভাবে এবছরই প্রথম গেজেটের মাধ্যমে জাতীয় কবি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে বর্তমান সরকারের সময়ে।”
--- মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন, সচিব ও মহাপরিচালক (দায়িত্বপ্রাপ্ত), বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের আয়োজনে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আজ ২৬ মে ২০২৫, সোমবার, সন্ধ্যা ৬:৩০ টায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় ‘চেতনা ও জাগরণে নজরুল’ শীর্ষক অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সচিব ও দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন। এতে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের পরিচালক মেহজাবীন রহমান।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সচিব ও দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন বলেন,
“প্রেমের কবি, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ইতোপূর্বে জাতীয় কবি হিসেবে মৌখিকভাবে বলা হলেও সরকারিভাবে এবছরই প্রথম গেজেটের মাধ্যমে জাতীয় কবি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে বর্তমান সরকারের সময়ে। এতদিনে আমাদের নজরুল প্রেমী যাঁরা আছেন, নজরুল গবেষক যাঁরা আছেন তাঁদের কাঙ্খিত একটি সাফল্য এসেছে জাতীয় কবিকে জাতীয় কবি হিসেবে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে। কাজী নজরুল ইসলামকে আমরা যে শুধু জাতীয় কবি বলি সেখানেও কিন্তু একটি সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলে আমি মনে করি। কাজী নজরুল ইসলাম- তাঁকে কোন বিশেষণে বিশেষায়িত করা যাবে বা ভূষিত করা যাবে সেটিও আমাদের বিশাল গবেষণার বিষয়। বাংলা সাহিত্য, বাংলা সংগীতে এমন কোনো অধ্যায়, এমন কোনো মাধ্যম নেই যেখানে কাজী নজরুল ইসলামের বিচরণ নেই। এমন প্রতিভাধর ব্যক্তি- তিনি যেমন বিদ্রোহী, তিনি যেমন প্রতিবাদী, তিনি যেমন সাম্যবাদী তিনি তেমনি প্রেমিক। তাঁর এই যে বিশাল সত্তা, নানাবিধ সত্তা আর কোনো মানুষের মধ্যে বিরাজ করে কিনা আমি সন্দেহ পোষণ করি। তাঁর এমন কবিতা রয়েছে যেখানে একটিমাত্র বাংলা শব্দ নেই। সকল শব্দ ও অন্যান্য বিদেশী ভাষাগুলোকে তিনি এমনভাবে সেখানে সন্নিবেশন করেছেন আপনি যখন সেই কবিতাটি আবৃত্তি করবেন আপনার কাছে মনে হবে সেটি বাংলায় আপনি পাঠ করছেন। অথচ এমন সুন্দরভাবে তিনি বাংলা বাদ দিয়ে হিন্দি, উর্দু, আরবি, ফারসি সকল ভাষা দিয়ে একটি কবিতা রচনা করেছেন।”
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সচিব ও দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাপরিচালক বলেন, “কাজী নজরুল ইসলাম সাম্যবাদের কবি। যখন যে অত্যাচার, যখন যে নিপীড়ন দেখেছেন তিনি সেটি তাঁর কবিতার মাধ্যমে, প্রবন্ধের মাধ্যমে ও লেখনীর মাধ্যমে ফুঁটিয়ে তুলেছেন। নজরুলের সেই বিদ্রোহী সত্তা, নজরুলের সেই সাম্যবাদ আমরা দেখেছি আমাদের সেই চব্বিশের জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে। আমাদের সেই বিদ্রোহী সত্তা, সেই প্রতিবাদী সত্তা আমাদের মাঝে বিরাজ করবে, আমরা সকল বৈষম্য সকল দুর্নীতি, সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে নজরুলের এই সত্তাকে গাজিয়ে রাখবো, বাঁচিয়ে রাখবো, অনুসরণ করবো এই হউক আমাদের আজকের অনুষ্ঠানে প্রধান অঙ্গিকার।
সাংস্কৃতিক পর্বের শুরুতে সমবেত সংগীত ‘দাও শৌর্য দাও ধৈর্য্য’ ও ‘জয় হোক’ পরিবেশন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কণ্ঠশিল্পীবৃন্দ ও নবীন কণ্ঠশিল্পীবৃন্দ। এরপর সমবেত নৃত্য ‘মোরা ঝঞ্জার মতো উদ্দাম’ পরিবেশন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যশিল্পীবৃন্দ। ‘ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ’ গানটি পরিবেশন করেন শাহিনুর আবেদিন। সমবেত সংগীত ‘আজি রক্ত নিশি ভোরে’ পরিবেশন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কণ্ঠশিল্পীবৃন্দ ও নবীন কণ্ঠশিল্পীবৃন্দ। এরপর বিশিষ্ট নজরুল সংগীতশিল্পী ফাতেমাতুজ্জোহরা একটি নজরুলসংগীত পরিবেশন করেন। নৃত্য সংগঠন বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টস পরিবেশন করে সমবেত নৃত্য ‘নদীর নাম সই অঞ্জনা’ এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কণ্ঠশিল্পীবৃন্দ ও নবীন কণ্ঠশিল্পীবৃন্দ পরিবেশন করেন সমবেত সংগীত ‘রুমঝুম রুমঝুম’ গানটি। একক সংগীত ‘আমার আপনার চেয়ে’ পরিবেশন করেন সুস্মিতা দেবনাথ সূচী ও ‘সুরে ও বাণীর মালা’ গানটি পরিবেশন করেন শহিদ কবির পলাশ। এরপর নৃত্য সংগঠন নৃত্যকুঞ্জ পরিবেশন করে সমবেত নৃত্য ‘মধুকর মঞ্জরি বাজে’ এবং নবীন নৃত্যশিল্পীবৃন্দ পরিবেশন করেন সমবেত নৃত্য ‘শুকনো পাতার নুপুর পায়ে’। একক সংগীত ‘খেলিছো এ বিশ্বলয়ে’ পরিবেশন করেন নম্রতা রানী বাষকোড় এবং ‘শাওন আসিল ফিরে’ গানটি পরিবেশন করেন বিশিষ্ট নজরুল সংগীতশিল্পী মো: সালাউদ্দিন আহম্মেদ। আবারো একক সংগীত ‘নব কিশলয় রাঙা সজ্জা’ পরিবেশন করেন বর্ণালী সরকার। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কণ্ঠশিল্পীবৃন্দ ও নবীন কণ্ঠশিল্পীবৃন্দ পরিবেশন করেন সমবেত সংগীত ‘মনের রং লেগেছে’ গানটি। সমবেত নৃত্য ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’ পরিবেশন করে নৃত্য সংগঠন বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টস এবং ‘চল চল চল’ পরিবেশন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যশিল্পীবৃন্দ। সবশেষে পরিবেশিত হয় নাটক ‘সেতুবন্ধ’, পরিবেশনায় ছিল বাঁশরি রেপার্টরী থিয়েটার।